১৪ বছরের সংসার

 ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ

 আল্লাহর কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া।আজ আমাদের ১৪ বছর পূর্ণ হল বিবাহর।আমাদের ১৪ তম বিবাহবার্ষিকী ও ২১ বছরের সম্পর্ক।আমাদের ভালবাসাটা শুরু  হয় সেই ছোট্টবেলা থেকেই।আজকের এই দিন আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় দিন।আমাদের বিশুদ্ধ ভালোবাসার আনন্দ এবং বেদনার স্মৃতিগুলো,আমাদের ভালোবাসাকে অনুরক্ত ও সমৃদ্ধ করেছে।আমার জীবনে এই দিনটা অতি মূল্যবান,যা আমি গভীরভাবে মূল্যায়ন করি।শুধু তোমার জন্য আয়েশা ।


 ‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের  মধ্যে  থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা রুম : আয়াত ২১


 ‘তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীগণ) তাদের পোশাকস্বরূপ`। (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)


 ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারাই স্ত্রীর অধিকার আদায়ে সামর্থ্য রাখে, তারা যেন অবশ্যই বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়।’ (বুখারি)


"বিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যাণ কর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর"

কাজী নজরুল ইসলাম।


(তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রুপে শত বার জনমে জনমে,যুগে যুগে অনিবার। চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়ে গাঁথিয়াছি গীতহার।কত রূপ  ধরে পরেছো গলায়,নিয়েছো সে উপহার,জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।)


 কিশোর বেলা থেকে ভালোবাসি তোমাকে,আজোও ভালবাসি। আর যতদিন বাঁচবো শুধু তোমাকে ভালোবেসে যাবো।পৃথিবীতে সুখ বলে যদি কিছু থেকে থাকে তার নাম ভালবাসা তার নাম প্রেম।জ্বলে পুড়ে মরার মাঝে যদি কোন সুখ থাকে তার নাম ভালবাসা তার নাম প্রেম।শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে।কত সাধনায় এমন ভাগ্যে মিলে।দীর্ঘ ৭ বছর আমাদের সম্পর্ক ছিল।এই ৭বছরে আমি ২টা চিঠি দিয়েছি, আর সে ২টা চিঠি উত্তর দিয়েছে। ৭বছরে শুধু মাত্র ৪টা চিঠি আদানপ্রদান হয়েছে।

ভাই নায়ক  সালমান শাহ্ 

একি প্রেম শিখাইয়া গেলা!!!


সেই ৭ বছর আমাদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।এই দীর্ঘ সময়ে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।আমরা দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসি। আমাদের এই ভালোবাসা মাপার কোন ফিতা নাই।গভীরতা দেখার কোন যন্ত্র নাই।


যদি সব সাগরের জল কালি হতো,যদি পৃথিবীর সব গাছ লিখনি হতো।আর সারাটা জীবন লিখে যেতাম,তবো তোমার আমার প্রেমের কথা লেখা শেষ হতো না।

একই সাথে হাত ধরে একই পথে চলবো।একই প্রাণে মিশে গিয়ে একই কথা বলবো।পাড়া-পড়শির খুঁচা কথা কত শুনিলাম।


(যায় যাবে কুলমান যাবে প্রাণ গেলেও ভালা।আমি সাধ করে পরেছি গলে শ্যাম কলষ্কের মালা।শাহ্ আব্দুল করিম)।


 কত বড় ভাইয়ের মার খেলাম।কত দৌড় দৌড়লাম।কত কষ্ট আমি করেছি।এরকম কষ্ট কেউ করেনি।

এলাকার মানুষও আমাকে কম জ্বালা-যন্ত্রণা দেয় নাই।আমার সমবয়সী ছেলেদের মা-বাবা আমার সাথে চলাফেরা করতে দেয়নি।কারণ আমি ছোট বেলা থেকে প্রেম করা শিখে ফেলেছি।আমার সাথে তারা মিশলে তাদের ছেলেরা খারাপ হয়ে যাবে।তাই আমার সাথে খেলা-ধুলাও করতে দেয়নি।আমাদেরকে এলাকার তারা যে ভাবে আমাকে শাসন করেছে।সেই ভাবে যদি তাদের ছেলে-মেয়েকে ও ভাই-বোনকে করতো শাসন করতো তাহলে সমাজে এরকম জঘন্য কাজ করতে পারতো না।আজ তাদের ছেলে-মেয়েরা মা-বাবার সামনে প্রেম করতেছে।ঘণ্টার পর ঘণ্টার মোবাইল দিয়ে  মা-বাবার সামনে কথা বলছে।আরো যে কত কি।কিন্তু আমাদের সময় তো আর মোবাইল ছিলোনা,যে কথা বলবো বা দেখা-সাক্ষাত করবো।অথচ একি গ্রামের আমরা দুজন।তাদের মত এমন সাহস করেনি।এলাকায় কিছু না করেই আমি  ভালনা।আর তারা অনেক কিছু করেছে,তারাই ভালা।

মুখে মুখে রটে যাবে,

আমাদের প্রেম কাহিনী।।

অবাক হয়েই দেখবে দুনিয়া

করবে সবাই কানাকানি।

মুখে মুখে রটে যাবে,

আমাদের প্রেম কাহিনী।

এলাকার কিছু মানুষ বলাবলি করলো আমি নাকি তাকে জোর করে বিয়ে করতেছি।যদি জোর করে কিংবা পালিয়ে বিয়ে করতাম ২০০৪ সালেই করতে পারতাম

সেই সময় কথাবার্তা। 


আয়েশাঃ তুমি ক্যারে খবর দিছো?

আমিঃ ক্যারে তুমি জানো না।

আয়েশাঃ তুমি তো ছেরা,যদি ছেরি হইতা তুইলে বুঝতা।কি লাইগা খবর দিছো কও?

আমিঃ আও বাইগা যাইগা।

আয়েশাঃ না,আমি এমন করে বাইগা যাইতাম না।বাপ-মা আমারে কষ্ট কইরা লেখা-পড়া করাইতাছে,আমি এমনে যামু ক্যামনে।

আমিঃ নাইলে তো আমি তোমারে পাইমু না।

আয়েশাঃ তুমি কোন চিন্তা কইরোনা, আমি তোমার আছি,আর থাকমু।আমি আমার বাপ-মারে বুঝামু।তুমি তোমার কাজ-কাম কর গিয়া।

আমিঃ তোমার বাপ-মা রাজি হলে কল দিও।


এরপর কেটে গেলো ২০০৫ সাল।ঝড়- তোফান তো আমাদের উপর দিয়ে যাইতেছে।আসলো ২০০৬ সাল।যেদিন আমি বিয়ে করবো,সেদিন আরো কত বিপদ যে এসে পড়লো।

এই নিয়ে কত কি।সেদিন মহিলা মেম্বার বাড়িতে আসছিল।তখন আয়েশাকে বললো তুমি কি এই বিয়েতে রাজি নি।তখন আয়েশা লিখিত দিলো,আমার ইচ্ছায়,আমি স্বজ্ঞানে বিয়ে করছি,আরো অনেক কিছু লিখে দিয়েছে।আরো অনেক ঝড়-তোফান এসেছে সেই দিন।যাই হোক,অবশেষে আমরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়।আজকের এই দিন শুধু এই দুজনার,আর কারো দিন এতো নয়।তোমার আমার প্রেম আজকের এই দিনে জানালো যে তার পরিচয়। সেই দিন তাকে পেয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে।সাগরের ঢেউ বলে তীর পেয়েছি।আকাশের পাখি বলে নীড় পেয়েছি।এই মন বলে আমি সুখি হয়েছি।একদিন দুটি চোখে স্বপ্ন ছিল,তোমাকে পেয়ে তা সত্যি হল।একদিন এ জীবনে আশা ছিল,তোমাকে পেয়ে তা পূর্ণ হল।আর কোন চাওয়া নেই,আর কোন পাওয়া নেই,সবি যেন পেয়ে গেছি।


প্রেমের কাহিনী শেষ।


এবার সংসার। সংসার যে করে সে বুঝে সংসার কি।সবাই মিলেমিশে ভালোই চলছে।২০০৯ সালে আমি ছেলের পিতা হলাম।ছিল আমার ২ পা,তার পর ৪ পা,৬ পা।সংসারের খরছ বাড়লো।কিন্তু আমার বেতন তো আর সেই ভাবে বাড়লো না।তাই মাঝে মধ্যেই পরিবারের কথা-বার্তা শুনতে হতো।যে কোন কারণেই হোক পরিবার থেকে আমাকে পৃথক করে দিলো।এখানেই শেষ নয়।পৃথক করার ২ বছর যেতে না যেতে বাড়িত থেকে বাহির করে দিয়েছে আমাকে।


(বড় সাধ করে গো সখি পিরিত করেছি

আমি এ-কুল সে-কুল দুকুল ছেড়ে 

বন্ধের প্রেম সাগরে ভেসেছি....।

শাহ্‌ আবদুল করিম)।


এই ভালবাসা বেঁচে থাকবেই,এই ভালবাসা বেঁধে রাখবেই।সুখের স্মৃতির মত হারিয়ে গেলে,পিছন থেকে সে তো ডাকবেই।


(কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী,প্রেরণা দিয়েছে,শক্তি দিয়েছে,বিজয় লক্ষ্ণী নারী।কাজী নজরুল ইসলাম)।


আগামীকাল  আপনার জীবনে কী ঘটতে যাচ্ছে তা কেউ যানে না। তারপরেও এই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের কল্পনার শেষ নেই। আর এই কল্পনা মাঝে মাঝে গিয়ে দাঁড়ায় চিন্তা আর জীবনকে কঠিন করার মাধ্যম। তাই আপনি ঠিক যে দিনটিতে অবস্থান করছেন সেই দিনটি মন ভরে উপভোগ করুন। দেখবেন কঠিন সময় আর আপনার কাছে কঠিন লাগছে না।

ভালবাসা যুগে যুগে,ভালবাসা সুখে-দুঃখে।ভালবেসে বুকে ধরে রাখবো।তোমাকেই ভালবেসেই মরবো।

 

২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত।আমি পৃথক হয়ে আমরা দুজনে যা করেছি।সৌর বিদ্যুৎ(সোলার) ২৫০০০/-ফ্রিজ ২৫০০০/-ভিট পাকা ২৭০০০/-টিবি ১৫৫০০/-খাট ৯০০০/-ডাইনিং টেবিল ১২০০০/-গ্যাস সিলিন্ডার ৫৪০০/-সুকেশ ৬০০০/-গরু ৪০০০০/-সেলাই মেশিন ৫০০০/-বাবার অপারেশন ১০০০০/একটা সংসার চালাতে কম লাগেনি।পরিবার থেকে আমি কোন কিছু পাইনি।আজ কত কি কিনলাম।তার সাথে সাথে আমারও যা শখ ছিল,তাও আমি পূরণ করেছি।ট্যাপ,ভিসিডি,মোবাইল,আই ফোন,ল্যাপটপ কম্পিউটার।,3g,4g মোবাইল।অনেক পরিশ্রম করে আজ আমি এই অবস্থানে এসেছি।কি রকম পরিশ্রম করেছি,আমার এম.সি.কলেজ ছাত্রাবাসের সহকর্মী তারা জানে।আজকে এতো কিছু করার পিছনে যার সবচেয়ে বেশি অবদান সে হল আমার প্রিয়তমা আয়েশা।এতো কিছুর কৃতিত্ব শুধুই তার।আমি শুধু মাস শেষে কয়েকটা টাকাই দিয়েছি।সব কিছু আয়েশাই করেছে।আমার জীবন ধন্য তার মত একজন জীবন সঙ্গী পেয়ে।


আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য, তোমারি প্রেমের জন্য।তোমারি পরশে জানি ওগো সোনা বউ জীবন হলো যে অনন্য।কপাল জুড়ে একেঁ দিলে সুখের জয়ও টিকা,আধার ঘরে জ্বেলে দিলে আলো প্রদীপ শিখা।হাতের রেখা মোর বদলে দিয়ে ভাগ্য করেছো প্রসন্ন।আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য তোমারি প্রেমের জন্য। আঁচল  দিয়ে বেধে রেখো এই সংসারের চাবি।তোমার মনে রেখো আমার ভালোবাসার দাবি।আষাঢ় শ্রাবণ নয় প্রেমের প্লাবনে দুটি হৃদয় হলো পুর্ণ। আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য, তোমারি প্রেমের জন্য।


(আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি। অনেক আধার আমাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করেছে।নীল হয়েছে আমার শিরা উপশিরা তবুও,তবুও আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি। তোমাকেই শুধু তোমাকে।

রুদ্র মোঃ শহীদুল্লাহ।)


যারা আমাকে প্রেম থেকে শুরু করে,আজকের এই দিন পর্যন্ত সাহায্য করেছেন,সকল বড় ভাই,বন্ধু-বান্ধব এবং ছোট ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার প্রেমের ইতিহাস লেখা শেষ হবে না।তারপরও শেষ করতে হয়।আপনারা দোয়া করবেন,আমরা যেন সৎ পথে থেকে সততা,বিশ্বাস আর সকলের ভালবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি।আমিও আপনাদের জন্য দোয়া করি সর্বদা ভাল থাকেন,সুস্থ থাকেন এবং সুন্দর যেন হয় আপনাদের জীবন।

বরাবরের মত শেষ কথা লিখে ও একটা গানের কলি লিখে শেষ করছি।(বিশ্বাসে সম্পর্ক মুজবুত হয়।

মান্নান+আয়েশা (১৯৯৯-২০২০)


আমার মত এত সুখী নয় তো কারো জীবন।কি আদর স্নেহ ভালবাসায় জড়ানো মায়ার বাধঁন।জানি এ বাধঁন ছিঁড়ে গেলে কভু,আসবে আমার মরণ।আমার মত এত সুখী নয় তো কারো জীবন।

আল্লাহ হাফেজ।।।ক্যাপ্টেন মান্নান।


https://captainmannan.blogspot.com

https://www.facebook.com/MannanCM7/

https://twitter.com/MannanCM?s=07

Instagram/mannancm7

https://www.linkedin.com/in/md-abdul-mannan-85a4811b3

mannan.mch@gmail.com

Comments

Popular posts from this blog

দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন আবু হানিফ।

১৫ তম বিবাহবার্ষিকী।